শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১
মামুন হোসেন, ভান্ডারিয়া (পিরোজপুর)।।
ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পেয়ে আত্মহারা যেমনি উপকূলের জেলেরা। আর তেমনি সস্তায় রুপালী ইলিশ কিনতে পেয়ে উপকূলবাসীর মধ্যে বইছে রকমারি আনন্দ উৎসব। ইলিশ এখন জণসাধারনের ক্রয়ক্ষমতার নাগালে। সেই সাথে সকাল-সন্ধ্যায় শুধু ইলিশ কিনতে স্থানীয় কচাঁনদীর পাড়ে, মাছের আড়ৎ, পাইকারী ও খুচরা বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাক-ডাক ও দর কষাকষিতে মুখরিত হচ্ছে প্রতিদিন ইলিশের বাজার।
বৃহস্পতিবার উপকূলীয় অঞ্চলের ভান্ডারিয়া উপজেলা সদর বাজার, পৌর শহরের সন্ধ্যা মাছ বাজার, চরখালী ঘাটে, কচাঁনদীর তীরবর্তি এলাকার তেলিখালী বাজারে ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।
চরখালী ঘাটে ইলিশ কিনতে আসা রিক্সা চালক সোহাগ আলী বলেন, মাছের দাম কম শুনে এসেছি তিনি ৪ ‘শ টাকায় এক হালি বড় ইলিশ কিনছেন। ভান্ডারিয়া পৌর শহরের সন্ধ্যা মাছ বাজারে ইলিশ কিনতে আসা স্কুলশিক্ষিকা নারগীস আক্তার বলেন, এক কেজি পরিমান ওজনের এক হালি ইলিশ কিনেছি ২৬ শত টাকায়। গত বছর যা কিনতে লাগতো ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা।
ইলিশ বিক্রেতা আল আমিন জানান, ইলিশের সরবারহ বেশি থাকায় দাম খুবই কম। পাইকারি বাজারে এক কেজির ওপরে ইলিশের হালি ২ থেকে আড়াই হাজার টাকার কমে বিক্রি হচ্ছে। আর এক কেজির নিচে বিক্রি হচ্ছে ২‘শ থেকে ৫‘শ টাকা কেজি ধরে।
গত বছরের তুলনায় এ বছর ইলিশের দাম অর্ধেক হওয়ার কারণ ও বড় বড় ইলিশ বাজারে ওঠার বিষয়ে ব্যখ্যা দিতে গিয়ে একাধীক জেলে ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, চলতি বছর সাগরে ৬৫ দিন মাছ ধরা নিষিদ্ধ ছিল যা গত ২৩ জুলাই সময়সীমা শেষ হয়। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পরও করোনার ভয়ে অধিকাংশ জেলেরা সাগরে বেশি একটা যাত্রা করেনি। ফলে মাছেরও আকার বড় হয়েছে। এছাড়া ভারতে ইলিশ রপ্তানী বন্ধ এবং চলছে ইলিশের ভরা মৌসুম সেই সাথে ইলিশের ব্যাপক সরবরহ হওয়ায় মাছের দাম কম।
জেলে আব্দুর রহমান ও মৎস ব্যবসায়ী মাসুম জানান, দেশের সীমান্তে অবৈধ পাচার ও ভারতে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ, দীর্ঘদিন ইলিশ সংরক্ষণের অভাবে প্রতিনিয়ত সাগর থেকে এ উপকুলীয় এলাকায় শত শত মণ ইলিশ ঢুকে পড়ছে। এছাড়া স্থানীয় কচাঁনদীর প্রচুর তাজা রুপালী ইলিশও বাজারে প্রভাব ফেলছে। ফলে এসব জনপদে এ বছর মাছের বাজার খুব সস্তা যাচ্ছে। তবে, সাগর থেকে আসা ইলিশ সংরক্ষণ না করা গেলে আমদানি বাড়তে থাকলে ধারাবাহিক দরপতনেও লোকসানে পড়বেন জেলে ও ব্যবসায়ীরা।
চরখালীর স্থানীয় মৎস্য ট্রলার মালিক সমিতির সেক্রেটারি মৎস আড়ৎদার মো: মামুন জানান, অনেক ইলিশ আসছে, রাখার জায়গা নেই। সংরক্ষণের জন্যও নেই বিশেষ কোন হিমাগার। করোনাকাল বিবেচনাসহ সবমিলিয়ে গত বছরের থেকে বর্তমান সময়ে প্রায় অর্ধেক দামে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ।
ভান্ডারিয়া উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মনোজ কুমার বলেন, বর্তমানে বৃষ্টিপাত ও নদ-নদীর পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক কচাঁয় ইলিশ ধরা পড়ছে। মূলত পানির গভীরতার সাথে ইলিশের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে তাই সামনের দিনগুলোতে আরো প্রচুর ইলিশ পাওয়া যাবে বলে তিনি আশাবাদী । তবে এই সময়ে সাগরে বেশি ইলিশ উঠছে। তাই মাছ সস্তা।